বিশেষ্য-বিশেষণ ভাব
1. যার উদ্দেশ্যে কিছু বলা হয়
সে হল বিশেষ্য, বিশেষ্যের বিষয়ে যা বলা হয় তা হল বিশেষণ । যেমন – বুদ্ধিমান ছাত্র। এখানে ছাত্রের বিষয়ে
বুদ্ধিমান শব্দটি প্রযুক্ত হয়েছে । কেমন ছাত্র? বুদ্ধিমান ছাত্র । বুদ্ধিমান শব্দটি ছাত্রকে
বিশেষিত করছে । এখানে বুদ্ধিমান শব্দটি
হল বিশেষণ । ছাত্রের বিষয়ে এখানে বলা
হচ্ছে তাই ছাত্র হল বিশেষ্য । এরকম – সুন্দর গাছ, সুন্দর দৃশ্য, সুন্দরী নারী,
ছোটো নদী, বড়ো বাড়ি ইত্যাদি স্থলেও বিশেষ্য বিশেষণ ভাব স্পষ্ট ।
2. বিশেষ্যের যে লিঙ্গ, যে
বচন ও যে বিভক্তি থাকবে বিশেষণেরও সেই লিঙ্গ, সেই বচন ও সেই বিভক্তি হবে । এই শ্লোকটি এই প্রসঙ্গে
কণ্ঠস্থ করা উচিত –
বিশেষ্যস্য হি যল্লিঙ্গং বিভক্তিবচনে চ যে ।
তানি সর্বাণি যোজ্যানি বিশেষণপদেষ্বপি ।।
যেমন – সুন্দরঃ বালকঃ। এখানে বালক হল বিশেষ্য । বালক শব্দটি পুংলিঙ্গ এবং
উদাহরণে প্রথমা বিভক্তির একবচনে ব্যবহৃত হয়েছে। বালক শব্দের বিশেষণ হল
সুন্দর শব্দ । তাই সুন্দর শব্দও
পুংলিঙ্গে এবং প্রথমা বিভক্তির একবচনে ব্যবহৃত হয়েছে । আবার সু্ন্দরী লতা -
এখানে লতা শব্দ স্ত্রীলিঙ্গে প্রথমা বিভক্তির একবচনে ব্যবহৃত হয়েছে । তাই স্ত্রীলিঙ্গী লতা
শব্দের বিশেষণ সুন্দর শব্দটিকেও স্ত্রীলিঙ্গে সুন্দরী (নদী শব্দের মতো) করে নেওয়া
হয়েছে, তারপর প্রথমা বিভক্তির একবচনে ব্যবহার করা হয়েছে । এরকম - সুন্দরীভিঃ
লতাভিঃ, এখানে বিশেষ্য লতা শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গে তৃতীয়ার বহুবচনে ব্যবহৃত হয়েছে তাই
সুন্দর শব্দটিকেও স্ত্রীলিঙ্গে তৃতীয়ার বহুবচনে প্রয়োগ করা হয়েছে । এরকম – দীর্ঘেণ দণ্ডেন,
লঘুনা হস্তেন, বিস্তৃতাত্ মার্গাত্, আলোকিতস্য গৃহস্য, সুন্দরাত্ পুষ্পাত্,
সুন্দরীষু নারীষু, দুঃখিতং নরম্, ধনিনঃ আপণিকাঃ ।
3. সুন্দর, দীর্ঘ, লঘু
ইত্যাদি শব্দগুলি তিন লিঙ্গেই ব্যবহৃত হয় । কিন্তু কিছু শব্দ বচন বিভক্তি অনুসারে পরিবর্তিত
হলেও তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করে না । এই শব্দগুলিকে অজহল্লিঙ্গ শব্দ বলা হয় । যেমন – ভাজনম্, আস্পদম্,
কারণম্, হেতুঃ, বিষয়ঃ, বিশেষঃ, নিদানম্ ইত্যাদি হল অজহল্লিঙ্গ শব্দ। এক্ষেত্রে উদাহরণ হল –
স্নেহাস্পদম্ ছাত্রঃ, শ্রদ্ধাভাজনম্ শিক্ষকঃ, প্রেমাস্পদম্ ভগিনী। এখানে লক্ষ্য
করো স্নেহাস্পদম্ হল ছাত্রশব্দের বিশেষণ কিন্তু ছাত্রশব্দ পুংলিঙ্গে হলেও বিশেষণ
প্রেমাস্পদ ক্লীবলিঙ্গেই আছে। বিশেষ্য অনুসারে লিঙ্গ এখানে পরিবর্তিত হয়নি। এরকম
বিশেষ্য ভগিনীশব্দ স্ত্রীলিঙ্গে হলেও বিশেষণ প্রেমাস্পদ ক্লীবলিঙ্গেই থাকবে।
কিন্তু এই অজহল্লিঙ্গ শব্দগুলির বচন বিভক্তি অনুসারে পরিবর্তন হয়। যেমন – স্নেহাস্পদেন
ছাত্রয়া গৃহং গম্যতে । শ্রদ্ধাভাজনস্য শিক্ষকস্য গৃহম্ । দুঃখকারণাত্
পত্ন্যাঃ পলায়তে । প্রথম উদাহরণে লক্ষ্য কর – বিশেষ্য ছাত্রা শব্দে স্ত্রীলিঙ্গে
তৃতীয়ার একবচন রয়েছে, কিন্তু বিশেষণ স্নেহাস্পদ শব্দ তৃতীয়ার একবচনে পরিবর্তিত
হলেও স্ত্রীলিঙ্গে পরিবর্তিত হয়নি। স্নেহাস্পদ শব্দটি অজহল্লিঙ্গ হওয়ায় নিজের
নপুংসকলিঙ্গ পরিত্যাগ করেনি। তাই অকারান্ত নুপংসকলিঙ্গী ফল শব্দের মতো তৃতীয়ার
একবচনে ব্যবহৃত হয়েছে।
4. যাকে উদ্দেশ্য করে ক্রিয়া
প্রযুক্ত হয় তা হল উদ্দেশ্য। আর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তা হল বিধেয় । একটি
বাক্যে সাধারণতঃ কর্তা বা কর্ম উদ্দেশ্য হয় আর ক্রিয়া বিধেয় হয়। তবে ক্রিয়া ঊহ্য
থাকলে বিশেষণ বিধেয় হয়। যেমন – রামঃ শিক্ষকঃ (রাম শিক্ষক) । এখানে ‘রাম’ উদ্দেশ্য এবং ‘শিক্ষক’ হল
বিধেয় । অজহল্লিঙ্গ শব্দের ক্ষেত্রে
উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের লিঙ্গ ও বচনের ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। যেমন – বেদাঃ প্রমাণম্।
অহিংসা পরমো ধর্মঃ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের বিভক্তি (প্রথমা,
দ্বিতীয়া ইত্যাদি) এক থাকে কিন্তু বচনে এবং লিঙ্গে হেরফের হতে পারে । উদাহরণ – মম পিতা এব মম
মাতা (উদ্দেশ্য বিধেয়ের লিঙ্গ ভিন্ন) । একঃ বৃক্ষঃ পঞ্চ নৌকাঃ ভবতি (উদ্দেশ্য এবং বিধেয়ের বচন
ভিন্ন) । এক্ষেত্রে নিয়মটি হল-
উদ্দেশ্যে চ বিধেযে চ
বিভক্তিস্তু সমা ভবেত্।
ক্বচিদ্ধি জায়তে তত্র
বৈষম্যং লিঙ্গসংখ্যযোঃ।।
বিশেষ্য-বিশেষণ ব্যবহার
বীরঃ রামঃ বালীং
মারয়তি। দক্ষাঃ সৈনিকাঃ তীক্ষ্ণৈঃ শরৈঃ
হিংস্রান্ শত্রূন্ মারয়ন্তি। সুন্দর্যঃ লতাঃ মৃদুনা বাযুনা স্পন্দন্তে।
দীর্ঘসূত্রিতা হি বিনাশস্য
হেতুঃ। স্নেহাস্পদানি ভ্রাতরঃ প্রশস্তে গৃহে পাঞ্চালিকয়া ক্রীডন্তি। শ্রদ্ধাভাজনং
শিক্ষকঃ বর্গে মেধাবিনঃ ছাত্রান্ পাঠয়ন্তি। তব বাক্যানি এব রামে মম বিশ্বাসে
কারণম্/হেতুঃ।
স্নেহময়ী অম্বা পরিষ্কৃতেন হস্তেন পুত্রান্ অন্নং খাদয়তি। কুশলী ব্যাধঃ বৃক্ষস্য
উপরি স্থাস্যতি। দুষ্টাঃ শিশবঃ কঠিনৈঃ দণ্ডৈঃ দীর্ঘং সর্পম্ অমারয়ন্। নরাঃ
নেত্রাভ্যাং পৃথিব্যাঃ সুন্দরং রূপং পশ্যন্তি।
পরিশ্রমিণঃ কর্ষকাঃ তীক্ষ্ণৈঃ খনিত্রৈঃ শুষ্কাণি ক্ষেত্রাণি কর্ষন্তি।
ভক্তিবিশিষ্টাঃ মানবাঃ চন্দনযুক্তৈঃ পুষ্পৈঃ করুণাময়ং দেবং পূজয়ন্তি। শান্তে
অপরাহ্ণে শুষ্কাণি পত্রাণি দীর্ঘাত্ বৃক্ষাত্ পতন্তি। ছাত্রে পাদাভ্যাম্ সুন্দরম্
উদ্যানং গচ্ছতঃ।
ভুল সংশোধন কর
সুন্দরাঃ নার্যঃ সুন্দরেণ
মার্গে গচ্ছতি। ত্বং মাম্ সুন্দরঃ গৃহে অপশ্যন্। স্থূলেন লেখন্যা দুষ্টানি ছাত্রাঃ
লিখন্তি। মম মিত্রাণি সচ্চরিত্রাঃ সন্তি। স্নেহাস্পদঃ গুরবঃ অস্মান্ উপদিশতি।
শিশোঃ গাত্রং পুষ্পবত্ কোমলঃ ভবতি। বীরঃ সৈনিকঃ প্রৰল বেগেন শত্রূন্ আক্রমতঃ।
অনুবাদ কর
1. রাম খাচ্ছে-
2. রাম ভাত খাচ্ছে-
3. রাম হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে-
4. রাম ক্ষুধানিবৃত্তির জন্য
হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে-
6. রাম মধ্যাহ্ণে থালা
(স্থালিকা)থেকে ক্ষুধানিবৃত্তির জন্য হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে-
7. রাম মধ্যাহ্ণে শ্যামের
থালা (স্থালিকা)থেকে ক্ষুধানিবৃত্তির জন্য হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে-
8. হে বিদিশা! সুশীল রাম
প্রখর মধ্যাহ্ণে তার স্নেহভাজন শ্যামের থালা(স্থালিকা)থেকে ক্ষুধানিবৃত্তির জন্য
পরিষ্কার হাত দিয়ে সুপাচ্য ভাত খাচ্ছে-
9. তোমরা যাচ্ছো-
10. তোমরা বিদ্যালয় যাচ্ছো-
11. তোমরা গাড়িতে করে
বিদ্যালয় যাচ্ছো-
12. তোমরা খেলার জন্য গাড়িতে
করে বিদ্যালয় যাচ্ছো-
13. তোমরা শহর থেকে খেলার জন্য
গাড়িতে করে বিদ্যালয় যাচ্ছো-
14. তোমরা শহর থেকে খেলার জন্য
শিক্ষকের গাড়িতে করে বিদ্যালয় যাচ্ছো-
15. তোমরা বিকালবেলা শহর থেকে
খেলার জন্য শিক্ষকের গাড়িতে করে বিদ্যালয় যাচ্ছো-
16. তোমরা শান্ত বিকালবেলায়
ব্যস্ত শহর থেকে খেলার জন্য গুণী শিক্ষকের দ্রুতগামী গাড়িতে করে দূরস্থ বিদ্যালয়
যাচ্ছো-
17. আমরা দুজন লিখছি-
18. আমরা দুজন
অক্ষরগুলি(অক্ষরম্) লিখছি-
19. আমরা দুজন পেন দিয়ে
অক্ষরগুলি লিখছি-
20. আমরা দুজন অভ্যাসের জন্য
পেন দিয়ে অক্ষরগুলি লিখছি-
21. আমরা দুজন অভ্যাসের জন্য
বই থেকে পেন দিয়ে অক্ষরগুলি লিখছি-
22. আমরা দুজন অভ্যাসের জন্য
শিক্ষকের বই থেকে পেন দিয়ে অক্ষরগুলি লিখছি-
23. আমরা দুজন পাঠশালায়
অভ্যাসের জন্য শিক্ষকের বই থেকে পেন দিয়ে অক্ষরগুলি লিখছি-
24. আমরা দুজন স্যারের অশান্ত
পাঠশালায় অভ্যাসের জন্য শ্রদ্ধাস্পদ শিক্ষকের বই থেকে স্থূল পেন দিয়ে সুন্দর
অক্ষরগুলি লিখছি-
25. সাধুরা স্নান করছে-
26. সাধুরা গঙ্গায় স্নান করছে-
27. সাধুরা গঙ্গায় সাবান দিয়ে (ফেনকম্) গঙ্গায় স্নান করছে-
28. সাধুরা দেহশুদ্ধির জন্য
সাবান দিয়ে গঙ্গায় স্নান করছে-
29. বৃন্দাবন থেকে আগত সাধুরা
দেহশুদ্ধির জন্য সাবান দিয়ে গঙ্গায় স্নান করছে-
30. বৃন্দাবন থেকে আগত সাধুরা
দেহশুদ্ধির জন্য ভক্তদের সাবান দিয়ে গঙ্গায় স্নান করছে-
31. পুণ্যতীর্থ বৃন্দাবন থেকে
আগত বিজ্ঞ জ্ঞানী সাধুরা দেহশুদ্ধির জন্য ভক্তিরসসিক্ত ভক্তদের সুগন্ধি সাবান দিয়ে
পুণ্যতোয়া গঙ্গায় স্নান করছে-
32. রামের পুত্র শ্যামের বাড়ি
থেকে পড়ার জন্য বাসে করে সকালবেলা স্কুলে যাচ্ছে-
33. লতা স্কুলের ক্লাসরুম থেকে
খেলার জন্য শ্যামের সাইকেলে করে বিকালবেলা রবির বাড়ি যাচ্ছে –
34. কবিরা বিকেলবেলা রবিবাবুর
বাড়ি থেকে ট্রেনে করে ভাত খাওয়ার জন্য নিজের বাড়ি যাচ্ছেন –
35.
মানুষেরা ঘোরার জন্য মন্দির থেকে সরকারের বাসে
সূর্যোদয়ের সময় হাতিবাগান যাচ্ছে-
36. ছাত্রটি খাবার ঘর থেকে রোগগুলির নিবারণের জন্য ডাক্তারের
গাড়িতে করে শহরের হাসপাতাল যাচ্ছে-
[1]
সকল সংস্কৃত পদের বা
ধাতুর রূপ মুখস্থ করা অসম্ভব। তাই পদগুলির সাধারণ ধর্মকে অনুসরণ করে কয়েকটি বিশেষ
শব্দরূপ বা ধাতুরূপ কণ্ঠস্থ করলেই সকল পদের রূপ জানা হয়ে যায়। প্রথমতঃ সেই বিশেষ শব্দ বা
ধাতুরূপগুলি মুখস্থ করতে হবে। যেমন – নর(অকারান্ত পুংলিঙ্গী), লতা (আকারান্ত
স্ত্রীলিঙ্গী), বারি(ইকারান্ত নপুংসকলিঙ্গী বা ক্লীবলিঙ্গী)। নূতন সংস্কৃত শব্দ
পেলে তার রূপ কেমন হবে তা জানার জন্য দুটি প্রশ্নের সাহায্য নেওয়া হয় – ১)শব্দটি
কোন লিঙ্গে আছে আর ২)শব্দটি কি কারান্ত? যেমন স্থালিকা শব্দটি
আকারান্ত এবং স্ত্রীলিঙ্গী তাই এটি আমাদের মুখস্থ করা ‘লতা’ শব্দের মতো হবে। লতা শব্দটি হল আকারন্ত স্ত্রীলিঙ্গী শব্দ। অনুবাদের
ক্ষেত্রে এই ধারণাটি থাকা খুবই জরুরী।