Friday, 31 March 2017

সকর্মক ও অকর্মক ধাতু - পাঠ ৬

সকর্মক এবং অকর্মক ধাতু

ধাতু দুই ধরণের হতে পারে - সকর্মক আর অকর্মক। যদি আমি শুধুমাত্র বলি যে আমি খাই তাহলে সাধারণ একটা প্রশ্ন আসে যে আমি কি খাই? আমি যদি শুধুমাত্র বলি যে আমি পড়ি তাহলে সাধারণ একটা প্রশ্ন আসে যে আমি কি পড়ি? যে ক্রিয়ায় এরকম কর্মের আকাঙ্ক্ষা থাকে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলা হয়। আর আমি ঘুমাচ্ছি বললে কেউই জিজ্ঞাসা করে না যে আপনি কী ঘুমাচ্ছেন? অর্থাৎ যে ক্রিয়ায় কর্মের আকাঙ্ক্ষা থাকে না সেগুলি হল অকর্মক ক্রিয়া।

ধাতুই হল ক্রিয়া - ধাতুশব্দঃ ক্রিয়াবচনঃ।  সুতরাং পঠ্ বা খাদ্ ধাতু হল সকর্মক ধাতু এবং শীধাতু হল অকর্মক ধাতু।
ধাতুর ক্ষেত্রে যে দুটি বিষয় আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল – ফল ও ব্যাপার। ধাতু ফল ও ব্যাপারবিশিষ্ট হয়। বলা হয় – ফলব্যাপারয়োর্ধাতুঃ। ব্যাপার হল মূল ও অবান্তর সবরকম ক্রিয়া। যেমন পচ্ ধাতুর অর্থ হল রান্না করা। ধরা যাক ভাত রান্না হচ্ছে। ভাত রান্নার পদ্ধতি এইরূপ – প্রথমে গ্যাস জালানো হল, তারপর হাড়িটি বা প্রেসার কুকারটি ধুয়ে ওভেন এ চাপানো হল, তারপর হাড়িতে বা কুকারে জল ও চাল দেওয়া হল ।  এরপর জল গরম হয়ে চাল সেদ্ধ হতে থাকল।  চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে হাঁড়ি বা প্রেসার কুকারটি নামানো হল। এই রান্না করার ফল হল সেদ্ধ হওয়া। আর গ্যাস জালানো থেকে শুরু করে হাঁড়ি বা কুকার নামানো পর্যন্ত ক্রিয়াগুলি হল ব্যাপার। সুতরাং পচ্ ধাতুর ফল হল সেদ্ধ হওয়া বা বিক্লিত্তি আর ব্যাপার হল গ্যাস জালানো, হাড়ি চাপানো ইত্যাদি। 

সকর্মক ও অকর্মক ধাতু নির্ণয়ের পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ। যে ধাতুর ফল ও ব্যাপারের আশ্রয় ভিন্ন ভিন্ন সেই ধাতু সকর্মক ধাতু। যে ধাতুর ফল ও ব্যাপারের আশ্রয় ভিন্ন নয় সেটি হল অকর্মক ধাতু। এরপর নিয়মটি আমরা বিস্তারে আলোচনা করব –

সকর্মক ধাতু – রামঃ অন্নং পচতি। এখানে পচ্ ধাতুর ফল হল সেদ্ধ হওয়া। সেদ্ধ হওয়ার আশ্রয় কি? অর্থাত্ কে সেদ্ধ হচ্ছে। দেখা গেল অন্ন সেদ্ধ হচ্ছে; রাম বা হাঁড়ি সেদ্ধ হচ্ছে না। অন্ন এই বাক্যে কর্ম। সুতরাং পচ্ ধাতুর ফলের (সেদ্ধ হওয়ার) আশ্রয় হল কর্ম (অন্ন)। ক্রিয়ার আশ্রয় সবসময় কর্তাই হয়ে থাকে। তাই গ্যাস জালানো ইত্যাদি অবান্তর বা গৌণ ক্রিয়ার অর্থাত্ ব্যাপারের আশ্রয় হল কর্তা রাম। সুতরাং, এখানে ফলের আশ্রয় হল কর্ম আর ব্যাপারের আশ্রয় হল কর্তা। যেহেতু, পচ্ ধাতুর ফল ও ব্যাপারের আশ্রয় ভিন্ন ভিন্ন তাই পচ্ ধাতু হল সকর্মক ধাতু। এরকম খাদ্, পঠ্, গম্, ক্ষিপ্ ইত্যাদি স্থলেও বুঝতে হবে।

অকর্মক ধাতু – রামঃ শেতে। এখানে শয়ন অর্থাত্ নিদ্রা যাওয়ার ফল হল আনন্দ বা শ্রম দূরীকরণ। শয়নের অবান্তর ব্যাপারগুলি হল অর্থাত্ গৌণ ক্রিয়াগুলি হল – বিছানা প্রস্তুত করা, শরীরকে বিছানার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে স্থাপন করা, চোখ বন্ধ করা ইত্যাদি। এখানে শয়নক্রিয়ার ফল আনন্দ রামের ই হয়, অর্থাত্ আনন্দের আশ্রয় এখানে রাম।  শয়নক্রিয়া এবং অন্যান্য অবান্তর ক্রিয়াগুলির আশ্রয় হল রাম, কারণ কর্তাই সর্বদা ক্রিয়ার আশ্রয় হয়।  সুতরাং, শয়নক্রিয়ার ফল এবং ব্যাপারের আশ্রয় হল রাম। শয়নক্রিয়ার ফল ও ব্যাপারের আশ্রয় অভিন্ন হওয়ায় অর্থাত্ আলাদা না হওয়ায় শয়নক্রিয়া হল অকর্মক ক্রিয়া বা শী ধাতু হল অকর্মক ধাতু।

তবুও একটা সাধারণ মঞ্চ গড়ে তোলা দরকার যেখানে অকর্মক ধাতুগুলি আরও সহজেই চিহ্নিত হবে। অকর্মকগুলি জানা হয়ে গেলে সেগুলো বাদ দিয়ে সকর্মকধাতুগুলির নির্ণয়ের পথও প্রশস্ত হবে। অকর্মক ধাতু নির্ণায়ক শ্নোকটি হল-

লজ্জা-সত্তা-স্থিতি-জাগরণং বৃদ্ধি-ক্ষয়-ভয়-জীবিত-মরণম্।
নর্তন-নিদ্রা-রোদন-বাসাঃ স্পর্ধা-কম্পন-মোদন-হাসাঃ।
শয়ন-ক্রীড়া-রুচি-দীপ্ত্যর্থাঃ ধাতব এতে কর্মণি নোক্তাঃ।

লজ্জা, সত্তা অর্থাত্ থাকা, স্থিতি অর্থাত্ গতিনিবৃত্তি, জাগরণ অর্থাত্ জেগে থাকা, বৃদ্ধি অর্থাত্ বেড়ে যাওয়া, ক্ষয়, জীবিত থাকা, মারা যাওয়া, নাচ করা, ঘুমানো, কাঁদা, বাস করা, স্পর্ধা করা, কাঁপা, আনন্দ করা, হাসা, শোওয়া বা ঘুমানো, খেলা, রুচি হওয়া এবং দীপ্ত বা প্রকাশিত হওয়া – এই অর্থে ব্যবহৃত ধাতুসমূহ[1] অকর্মক হয়। এগুলি ছাড়া অন্যান্য ধাতুগুলি হল সকর্মক ধাতু।

লজ্জা – লজ্জ্
সত্তা – অস্, ভূ
স্থিতি – স্থা
জাগরণ – জাগৃ
বৃদ্ধি – বৃধ্, এধ্
ক্ষয় – ক্ষি
ভয় – ভী
জীবন – জীব্
মরণ – মৃ
নর্তন – নৃত্
নিদ্রা – নিদ্র্
রোদন – ক্রন্দ্, রুদ্
বাস করা – বস্
স্পর্ধা – স্পর্ধ্
কম্পন  - কম্প্, বেপ্
মোদন – মুদ্, নন্দ্
হাসা – হস্
শয়ন – শী
ক্রীড়া – খেল্, ক্রীড্
রুচি – রুচ্
দীপ্তি – ভা, প্র-কাশ্ ইত্যাদি।







[1] একই অর্থে অনেক ধাতু থাকতে পারে। যেমন যাওয়া অর্থে গম্, অয়্, ঋ, ইণ্, যা ইত্যাদি অনেক ধাতু আছে। 

5 comments: